বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ক্রমাগতভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নিয়ে কথায় বলায় তাকে ‘তত্ত্বাবধায়ক রোগে’ পেয়ে বসেছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, এটি মির্জা ফখরুল সাহেবের গতানুগতিক প্রতিদিনের বক্তব্য। সংবিধান অনুযায়ী চলতি সরকারই নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করবে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশ যেমন ভারত, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, নিউজিল্যান্ড এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যেভাবে চলতি সরকার নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করে, আমাদের দেশেও তাই হবে। সংবিধানের কোনো ব্যত্যয় হবে না।
রোববার (১৮ জুন) দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই দাবিটা আন্তর্জাতিকভাবে কারো সমর্থন পায়নি। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও তাদের এই দাবিকে সমর্থন করেনি। এটা শুধু মির্জা ফখরুল সাহেবের মুখের মধ্যেই আছে। আশা করি তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার রোগ থেকে মুক্তি লাভ করবেন।’
সিরাজগঞ্জে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হুমকি দেওয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বিএনপি প্রমাণ করেছে এটা তাদেরই বক্তব্য এমন মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এর আগে রাজশাহী বিএনপির আহ্বায়ক জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন এরপর সিরাজগঞ্জে জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাশিদুল হাসান রঞ্জন জননেত্রীকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। আসলে বিএনপি ভেতরে ভেতরে যে ষড়যন্ত্রটা করছে, সেটিরই বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে তাদের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের এই সমস্ত বক্তব্য।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর স্বাধীনতাবিরোধী দেশি ও আন্তর্জাতিক অপশক্তি মিলে বঙ্গবন্ধুকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে হত্যার পথ বেছে নিয়েছিল। আজকেও বিএনপিসহ যে রাজনৈতিক অপশক্তি বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়, তারা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছে, পরপর তিনবার জনগণের রায় নিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছিল আজকে বিএনপি যে সেই একই পথে হাঁটছে, একই পরিকল্পনা করছে, বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি নেতাদের এ সমস্ত বক্তব্য তারই বহিঃপ্রকাশ।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি দুটি ষড়যন্ত্র নিয়ে এগোচ্ছে। একটি হচ্ছে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ‘এলিমিনেট’ করা, আরেকটি হচ্ছে দেশে একটি অস্বাভাবিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে দেশটাকে অপশক্তির হাতে তুলে দেওয়া। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ সেটি হতে দেবে না। আমি সিরাজগঞ্জে যে ঘটনা ঘটেছে তার তীব্র নিন্দা জানাই। বিএনপিরই উচিত ছিল তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সেটি না করে বরং তার পক্ষ অবলম্বন করে বিএনপি স্বীকার করে নিয়েছে এটি তাদেরই বক্তব্য।’
মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে চীনের মন্তব্যের বিষয় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্র নীতি হচ্ছে সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে শত্রুতা নয়। যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের দ্বিমুখী অবস্থান আন্তর্জাতিকভাবে আমরা বিভিন্ন সময় দেখি। এই ক্ষেত্রেও চীন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে মন্তব্য করেছে, আমরা সেটা পর্যবেক্ষণ করছি। আমাদের সাথে দুই দেশেরই অত্যন্ত চমৎকার সম্পর্ক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের উন্নয়ন সহযোগী, গত ৫১ বছরে আমাদের পথচলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। তাদের সাথে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। একইসাথে চীনও আমাদের উন্নয়ন সহযোগী এবং এ দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রেখেছে। সুতরাং সব দেশের সাথেই আমাদের অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক।’