গাজায় স্থল অভিযানে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। ছবি: আনাদুলু এজেন্সি
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় স্থল অভিযান পরিচালনা করছে ইসরায়েল। সেখানে বিভিন্ন স্থাপনা, হাসপাতালেও চালানো হচ্ছে হামলা। তবে স্থল অভিযানে খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি ইসরায়েলের। সেখানে হামাসের সঙ্গে পরে উঠছে ইসরায়েলি সেনারা। এখন পর্যন্ত গাজায় স্থল অভিযানে গিয়ে ৪৫ সেনা প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানিয়েছে ইসরায়েল।
সোমবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী উত্তর গাজায় লড়াইয়ে আরও দুই সেনা নিহত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ২৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া উত্তর গাজায় ইসরায়েলের স্থল অভিযানে রোববার পর্যন্ত নিহত ইসরায়েলি সেনার সংখ্যা ৪৫। খবর আনাদুলু এজেন্সির
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৩৬৩ সেনা, ৫৯ জন পুলিশ এবং ১০ জন শিন বেটের সদস্যকে হারিয়েছে ইসরায়েল।
এর আগে শুক্রবার হামাসের টানেলে পাতা ফাঁদে পা দিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন চার ইসরায়েলি সেনা। এছাড়া গোলাগুলোতে আরও এক ইসরায়েলি সেনার মৃত্যু হয়।
ইসরায়েলি ইনেট নিউজ ওয়েবসাইট একটি সামরিক বিবৃতির বরাত দিয়ে জানিয়েছে, উত্তর গাজার বেইত হানুনে একটি বুবি-ফাঁদ টানেলে চার সেনা এবং আরেকজন উত্তরে যুদ্ধে নিহত হয়েছেন।
বুবি-ফাঁদ হলো এমন একটি ডিভাইস বা সেটআপ, যা মানুষ বা অন্য প্রাণীকে হত্যা, ক্ষতি বা অবাক করার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। এটি শিকারের উপস্থিতি বা ক্রিয়া দ্বারা ট্রিগার হয় এবং কখনও কখনও শিকারকে এর দিকে প্রলুব্ধ করার জন্য কিছু টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
গাজাজুড়ে বিভিন্ন এলাকায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধী গোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকে প্রচণ্ড যুদ্ধের মুখোমুখি হচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা এখন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। ছিটমহলটিতে যে গুটিকয়েক হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে তার মধ্যে ২২টি হাসপাতাল ও ৪৯টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ইসরায়েলের হামলা ও জ্বালানি সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে। গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ১১ হাজার ১৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ৮ হাজারই শিশু ও নারী বলে জানিয়েছে সেখানকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
অবরুদ্ধ ছিটমহলের সরকারি মিডিয়া অফিস রোববার বলেছে, ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে গাজা উপত্যকার মোট ২২টি হাসপাতালের পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘চিকিৎসা কর্মীদের জন্য হুমকিসহ হাসপাতালগুলোকে ইচ্ছাকৃতভাবে টার্গেট করা ও ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে মোট ২২টি হাসপাতাল এবং ৪৯টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। এছাড়া ইসরায়েল এখন পর্যন্ত ৫৩টি অ্যাম্বুলেন্স ধ্বংস করেছে।’
আরও পড়ুন: এক টেবিলে আরব ও মুসলিম বিশ্ব, কী পেল ফিলিস্তিনিরা?
গাজার মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১১ হাজার ১৮০ জনে পৌঁছেছে। এর মধ্যে ৪ হাজার ৬০৯টি শিশু এবং ৩১০০ জন নারী। আহতের সংখ্যা ২৮ হাজার ২০০। আহতদের ৭০ শতাংশ শিশু ও নারী।
গাজা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০টি মসজিদ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ১৫৩টি মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তিনটি গির্জা।
গাজা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় গাজার কৃষি ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ১৮০ মিলিয়ন ডলার। গাজার যে অল্প পরিমাণ কৃষি এলাকা রয়েছে তার ২৫ শতাংশ ধ্বংস হয়ে গেছে।
গাজার মিডিয়া অফিসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েল সরাসরি ৯২টি সরকারি অফিস, ২৪১টি স্কুলকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। গত ৩৭ দিনে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় আকাশ, স্থল ও সমুদ্র থেকে আক্রমণ করছে। আবাসিক এলাকাগুলো পুরোপরি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। গাজায় নিহতদের প্রায় সবাই বেসামরিক নাগরিক।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু রোববার জানিয়েছেন যে, গাজা উপত্যকায় আটক জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসের সঙ্গে একটি সম্ভাব্য চুক্তি হতে পারে।