মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের উপর চতুর্থ দফা হামলা চালিয়েছে। বুধবার রাতে পেন্টাগন কর্মকর্তারা এই হামলার কথা নিশ্চিত করেছেন। এদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন যে, পশ্চিমা হামলার সুবিধা নিচ্ছে হুথিরা।
র্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে যে, লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা চালান হতে পারে এমন ১৪টি হুথি স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হুথিদের ‘বৈশ্বিক সন্ত্রাসী’ হিসাবে মনোনীত করার সময় এই হামলা চালানো হয়। খবর বিবিসি ও ডয়চে ভেলের
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন যে, এই পদক্ষেপ লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে চলমান হামলার প্রতিক্রিয়া হিসাবে ছিল।
বিশেষজ্ঞদের একটি বড় অংশ মনে করছে, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে যেভাবে ইয়েমেনে আক্রমণ চালিয়েছে, তাতে লাভ হচ্ছে হুথিদেরই। ইরানের মদতপুষ্ট এই বিদ্রোহীরা দেশের মানুষকে অনেক দিন ধরেই বোঝানোর চেষ্টা করছে যে তারা যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েলের মতো শক্তিগুলোর সঙ্গে লড়াই চালাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি আক্রমণ এটির প্রমাণ দিল।
ওয়াশিংটন ইনফরমেশন রিসার্চ সেন্টার ফর ইয়েমেনের সাবেক ডিরেক্টর হিশাম-আল-ওমেইসি বলেন, ‘গত আট বছর ধরে হুতি বিদ্রোহীরা তাদের বন্ধুদের বলার চেষ্টা করছে যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে লড়াই করছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের এই আক্রমণ তাদের এই দাবিকে জিতিয়ে দিল।’
২০১৪ সাল থেকে ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ চলছে। সৌদি আরবের মদতপুষ্ট সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে ইরানের মদতপুষ্ট হুথি বিদ্রোহীরা। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর দেশের উত্তর এবং পশ্চিম প্রান্ত এখন হুথিদের দখলে। অর্থাৎ, ইয়েমেন থেকে লোহিত সাগরের ঢোকার যে রাস্তা, তা এখন হুথিদের হাতে। অন্যদিকে, দক্ষিণ ইয়েমেন সৌদি আরবের মদতপুষ্ট সরকারের হাতে। আন্তর্জাতিকভাবে এই সরকারই ইয়েমেনে স্বীকৃত।
দীর্ঘযুদ্ধে জর্জরিত ইয়েমেন। অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি। এই অবস্থায় সৌদির মদতপুষ্ট সরকারের সঙ্গে দীর্ঘ যুদ্ধ-বিরতিতে ঢুকেছে হুথি বিদ্রোহীরা। আলোচনা চলছে। হুথিদের দাবি, তাদের সরকারকে স্বীকৃতি দিতে হবে। ইরান ছাড়া আর কোনো দেশই তাদের স্বীকৃতি দেয় না। দেশের জনগণকে তারা বোঝাচ্ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই নিয়ে তারা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। বস্তুত, সে কারণেই তারা লোহিত সাগরে একের পর এক আক্রমণ চালাচ্ছিল বিভিন্ন দেশের পণ্যবাহী জাহাজে।
নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার সুযোগ খুঁজছিল তারা। যেহেতু লোহিত সাগরের রাস্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথ, তা-ই এই রাস্তাতেই আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয় তারা। যুক্তরাষ্ট্র কোনো কৌশলে না গিয়ে সরাসরি তাদের আক্রমণ করে হুতিদের চেষ্টাটাই আসলে সফল করে দিল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।