এমন একটা ভোরের জন্য কত অপেক্ষাই না ছিল বাংলাদেশের। নিউজিল্যান্ডের ম্যাচগুলো সাধারণত শুরু হয় ভোর চারটায়; ঘুম থেকে উঠে বরাবরই হতাশই হতে হয়েছে সমর্থকের।
মাউন্ট মঙ্গুনই টেস্টে জেতার সুখস্মৃতি দোলা দিয়েছে গত কয়েক বছর; কিন্তু রঙিন পোশাকে জয় পাওয়া হয়নি কখনো।
দীর্ঘ ১৬ বছর আর ১৮ ম্যাচের অপেক্ষার পর অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তাদের বিপক্ষে প্রথম জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তানজিম হাসান সাকিব, শরিফুল ইসলামের বোলিংয়ে প্রথম ইনিংসের পরই সেটি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল অনেকটা।
ব্যাটিংয়ে অবিশ্বাস্য খারাপ না করলে জয় ছিল নিয়তি, হয়েছেও সেটি।
নেপিয়ারে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের শেষটিতে ৯ উইকেটে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
শুরুতে ব্যাট করতে নেমে স্রেফ ৯৮ রানে অলআউট হয়ে গেছে স্বাগতিকরা। জবাব দিতে নেমে স্রেফ ১৫ ওভার ২ বলেই লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে সফরকারীরা। সিরিজ অবশ্য ২-১ ব্যবধানে ঠিকই জিতে নিয়েছে কিউইরা, তবে বাংলাদেশের স্বস্তি প্রথম জয় পাওয়ার।
টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। একাদশে আনে একটি পরিবর্তন। হাসান মাহমুদের জায়গা নেন মোস্তাফিজুর রহমান। বোলিংয়ে অবশ্য এখন অবধি মূল কাজটা করছেন তানজিম হাসান সাকিব ও শরিফুল ইসলাম।
ইনিংসের চতুর্থ ওভারের শেষ বলে গিয়ে প্রথম উইকেট পায় বাংলাদেশ। তানজিম সাকিবের বলে খোঁচা মেরে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ দেন রাচিন রবীন্দ্র। ১২ বলে ৮ রান করে ফিরে যান তিনি।
পরের ওভারে এসে মেডেন করেন তানজিম। এরপর নিজের চতুর্থ ও দলের অষ্টম ওভার করতে এসে পান আরও একটি উইকেট। এবার তার ওভারেই ১২ বলে ১ রান করে মিড অনে ক্যাচ দেন হেনরি নিকোলস। প্রথম পাওয়ার প্লে শেষ অবধি হয়েছে বাংলাদেশেরই। ১০ ওভারে কেবল ২৭ রান তোলে নিউজিল্যান্ড, ৫ ওভারে ৯ রান দেন তানজিম সাকিব।
এরপর আগের ম্যাচে দুর্দান্ত করা দুই ব্যাটার টম লাথাম ও উইল ইয়াং জুটি বাধেন আবারও। এবার টম লাথামকে বোল্ড করে ৩৬ রানের জুটিটি ভেঙে দেন শরিফুল ইসলাম। ৩৪ বলে ২১ রান করে আউট হন কিউই অধিনায়ক।
লাথামের পর থিতু হওয়া আরেক ব্যাটার ইয়াংকেও আউট করেন শরিফুল। ৪৩ বলে ২৬ রান করা ওপেনার গলিতে ক্যাচ দেন মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে। পরে মার্ক চাপম্যানকেও শরিফুল ফেরালে স্রেফ ৬৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে নিউজিল্যান্ড।
বাকি পাঁচটি উইকেট সৌম্য, মোস্তাফিজ ও তানজিম সাকিব মিলে নেন। ৭ ওভারে স্রেফ ১৪ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন তানজিম। সৌম্য ও শরিফুলও নেন তিনটি করে উইকেট। একটি উইকেট গেছে মোস্তাফিজের ঝুলিতেও।
নিউজিল্যান্ডকে এই প্রথম একশ রানের নিচে থামায় বাংলাদেশ। এর আগে মিরপুরে ২০১৩ সালে স্রেফ ১৬২ রানে অলআউট হয় তারা। দেশের মাটিতে আজকের আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বনিম্ন রান ছিল ২০১৬ সালে ২৫১ রান।
সহজ রান তাড়াই ছিল বাংলাদেশের জন্য। এর আগে কখনোই একশ রানের নিচে তাড়া করতে নেমে হারেনি বাংলাদেশ। যত সময় গড়িয়েছে, আজও কমেছে সেই সম্ভাবনা। দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ড একবারই হেরেছে ১০ উইকেটের ব্যবধানে। ১৯৮৭ সালে ক্রাইস্টচার্চে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।
দ্বিতীয়বার এমন ঘটনা ঘটানোর পথে ভালোভাবেই ছিল বাংলাদেশ। এমনিতে শুরুতে অবশ্য উঠে যেতে হয় ওপেনার সৌম্য সরকারকে, তবে আউট হয়ে নয়। চোখে সমস্যা হওয়ায় রিটায়ার্ড হার্ট হন তিনি। ১৬ বলে ৪ রান করে সাজঘরে ফেরত যান সৌম্য।
এরপর উইকেটে এসে এনামুল হক বিজয়ের সঙ্গী হন নাজমুল হোসেন শান্ত। এ দুজন মাঝে ভুল বুঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে যাচ্ছিলেন শান্ত, কিন্তু সরাসরি থ্রোতে স্টাম্প ভাঙতে পারেননি উইল ইয়াং।
এরপর অবশ্য বিজয় আউট হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের ১০ উইকেটের জয় পাওয়া হয়নি। ৩৩ বলে ৩৭ রান করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনি। তবে দলের বাকি কাজটুকু সারেন শান্ত ও লিটন। জয়ের রানটাও আসে শান্তর ব্যাট থেকে, একই সঙ্গে পূর্ণ হয় তার হাফ সেঞ্চুরি। এরপর আকাশের দিকে তাকিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাসই ছাড়েন বাংলাদেশের ‘ভারপ্রাপ্ত’ অধিনায়ক।