• ১৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৩১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিয়ের অনুষ্ঠানে বরপক্ষের কাছে টাকা চাওয়া কি জায়েজ?

ডেস্ক
প্রকাশিত জুলাই ২৬, ২০২৩, ০৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ
বিয়ের অনুষ্ঠানে বরপক্ষের কাছে টাকা চাওয়া কি জায়েজ?
সংবাদটি শেয়ার করুন....

ইসলামে বিয়ে একটি মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত। এই ইবাদতে শরিয়ত অনুমোদিত নয়—এমন কোনো কাজকর্ম করা যাবে না। কুসংস্কার ও গুনাহ থেকে বিয়েকে মুক্ত রাখা জরুরি। এসব অনৈসলামিক বিষয়ে খেয়াল রাখা আয়োজনকারীদের কর্তব্য। কেউ যদি সেখানে শরিয়তবিরোধী কোনো কাজের আয়োজন করে, বেপর্দা পরিবেশ সৃষ্টি করে, সেখানে যত গুনাহ হবে, এর অংশ তাদেরও বহন করতে হবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা খারাপ কাজে সহযোগিতা করতেও নিষেধ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা গুনাহ ও সীমালঙ্ঘনের ক্ষেত্রে কারো সহায়তা করো না।’ ( সুরা মায়েদা: ২)

বিয়ের অনুষ্ঠানে গেইট সাজিয়ে বরপক্ষের কাছ থেকে জোর পূর্বক টাকা আদায় করা জায়েজ নেই। এই কাজ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। (ফতোয়ায়ে কাসেমিয়া: ২/২২৮ ফতোয়ায়ে উসমানিয়া: ২/৩০৯)

বিয়েশাদিতে হলুদ অনুষ্ঠান, ডিজে পার্টি, আতশবাজিসহ যত ধরনের অপসংস্কৃতি আছে, সবই বর্জনীয়। আবার অনেকে মনে করেন, বিয়ের দিন বর-কনেকে কোলে নিয়ে উপহার দিতে হয়। শরিয়তের দৃষ্টিতে এ ধরনের কাজ অগ্রহণযোগ্য। এর মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা তো রয়েছেই। যেমন—কোনো ব্যক্তি তার পুত্রবধূকে পাশে বসিয়ে উপহার দেওয়ার সময় যদি শয়তানের ধোঁকায় তার মনের মধ্যে ন্যূনতম কামভাব চলে আসে (নাউজুবিল্লাহ!), তাহলে তার ছেলের জন্য এই মেয়ে হারাম হয়ে যাবে। কারণ কামভাব নিয়ে কোনো নারীকে স্পর্শ করলে ওই নারীর সঙ্গে হুরমতে মুসাহারাত সাব্যস্ত হয়ে যায়। (ফতোয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত: ৬/১৭২)

বিয়ের অনেক অনুষ্ঠানে দেখা যায় প্রবেশ পথে গিফট বুথ স্থাপন করা হয়। এটি অত্যন্ত দৃষ্টিকটু ও নিম্নরুচির পরিচায়ক। এতে আগত মেহমানরা লজ্জায় পড়ে যায়। যেসব উপঢৌকন দেওয়া হয়, তা যদি চক্ষুলজ্জার খাতিরে বা সামাজিক চাপে বা সুখ্যাতি কিংবা তার বিনিময় পাওয়ার উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে, তাহলে তা গ্রহণ করা অবৈধ। আর যদি প্রফুল্লচিত্তে ভালোবাসার স্মারকস্বরূপ দেওয়া হয় এবং না দিলে কোনো ধরনের অপমান করা না হয়, তাহলে ওই উপহারসামগ্রী গ্রহণ করা বৈধ। (সুনানে বায়হাকি: ১১৫৪৫; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ৪/৩৮৩)

বিয়ে উপলক্ষে বরযাত্রী গমন ও মেয়ের বাড়িতে আপ্যায়ন যদি কোনো ধরনের বাধ্যবাধকতাহীন এবং সানন্দে হয়, তাহলে তা বৈধ, অন্যথায় অবৈধ। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, মেয়ের বাড়িতে বরযাত্রীদের দাওয়াত গ্রহণ ও মেহমানের সংখ্যা নিয়ে চাপ সৃষ্টি করা হয়, যা সত্যি নিন্দনীয়। শরিয়তের দৃষ্টিতে এটি মেয়ের পরিবারের প্রতি অবিচার। সুতরাং এমন কাজ পরিহার করা উত্তম। (আস-সুনানুল কুবরা: ১১৫৪৫, ফতোয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ: ৭/৫২২)

বিয়ের সময় বরকে গেটে আটকে রেখে টাকা আদায় করা হয়। সেখানে উভয় পক্ষের যুবক-যুবতীরা বিভিন্ন ধরনের দুষ্টমিতে মেতে ওঠে। এখানে যেমন শরিয়তের মহান হুকুম পর্দা লঙ্ঘন হয়। তেমনি অনেক সময় চাপ সৃষ্টি করে বেশি টাকা আদায় করা হয়। অথচ রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘কোনো মুসলমানের সম্পদ তার আন্তরিক সম্মতি ছাড়া হস্তগত করলে তা হালাল হবে না।’ (বায়হাকি: ১৬৭৫৬)

এমনি নতুন জামাই কিংবা কনেকে হাত ধুইয়ে টাকা উসুল করা, বাসর ঘরে গেট ধরে জোরপূর্বক টাকা উসুল করা উচিত নয়। যদি বর বা কনে স্বেচ্ছায় তাদের আত্মীয়-স্বজনদের কিছু দেয়, তা নিতে কোনো অসুবিধা নেই।

এছাড়াও বিয়েতে যেন বেশি খরচ না হয় সে বিষয়ে বিশেষ মনোযোগী হতে হবে। কেননা বিয়েশাদির অনুষ্ঠান যত অনাড়ম্বর হবে, খরচ যত কম হবে ততই তা বরকতপূর্ণ হবে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘সর্বাধিক বরকতপূর্ণ বিয়ে হচ্ছে, যার খরচ যত সহজ ও স্বাভাবিক হয়।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৪৫২৯) মহান আল্লাহ আমাদের বোঝার তাওফিক দান করুন। আমিন।