• ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রজব মাসে রমজানের প্রস্তুতি, দোয়া ও আমল

ডেস্ক
প্রকাশিত জানুয়ারি ২০, ২০২৪, ১৪:৪৩ অপরাহ্ণ
রজব মাসে রমজানের প্রস্তুতি, দোয়া ও আমল
সংবাদটি শেয়ার করুন....

পবিত্র রমজানের প্রস্তুতির মাস রজব। আবার এই মাসটি সম্মানিত চারটি মাসের একটি। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- اِنَّ عِدَّۃَ الشُّهُوۡرِ عِنۡدَ اللّٰهِ اثۡنَا عَشَرَ شَهۡرًا فِیۡ کِتٰبِ اللّٰهِ یَوۡمَ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ مِنۡهَاۤ اَرۡبَعَۃٌ حُرُمٌ ؕ ذٰلِکَ الدِّیۡنُ الۡقَیِّمُ ۬ۙ فَلَا تَظۡلِمُوۡا فِیۡهِنَّ اَنۡفُسَکُمۡ وَ قَاتِلُوا الۡمُشۡرِکِیۡنَ کَآفَّۃً کَمَا یُقَاتِلُوۡنَکُمۡ کَآفَّۃً ؕ وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰهَ مَعَ الۡمُتَّقِیۡنَ ‘নিশ্চয় আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর কাছে গণনায় মাস ১২টি, তার মধ্যে ৪টি নিষিদ্ধ মাস, এটাই প্রতিষ্ঠিত দ্বীন। কাজেই এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করো না এবং তোমরা মুশরিকদের সাথে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করো, যেমন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করে থাকে। আর জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকিদের সাথে আছেন। (সুরা তাওবা: ৩৬)

আল্লাহর নির্ধারিত ১২টি মাসের মধ্যে ৪টি সম্মানিত মাসের পরিচয় চিহ্নিত করে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, তিনটি মাস হলো ধারাবাহিক— জিলকদ, জিলহজ ও মহররম, অপরটি হল রজব। (বুখারি: ৩১৯৭; মুসলিম: ১৬৭৯) অন্য বর্ণনায় এসেছে, রজব মাস জমাদিউস সানি ও শাবান মাসের মাঝখানে থাকে। (বুখারি: ৪৬৬২; মুসলিম: ১৬৭৯)

সম্মানিত মাসের অন্তর্ভুক্ত হওয়া ছাড়াও রজব মাসের মর্যাদা আরেকটি কারণে বেড়ে গেছ। তা হলো- পবিত্র মেরাজের ঘটনা। প্রসিদ্ধ মতানুসারে রজব মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে সংঘটিত হয়েছে।

রজব মাসের একটি বিশেষ দিক হলো- এ মাস আসে পবিত্র মাহে রমজানের আগমনী বার্তা নিয়ে। তাই রজব থেকেই রাসুলুল্লাহ (স.) রমজান মাসের প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। রজবে তিনি এই দোয়া পড়তেন-اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبٍ، وَشَعْبَانَ، وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শাবান ওয়াবাল্লিগনা রমাদান।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাদের জন্যে রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করুন এবং রমজান মাস পর্যন্ত আমাদের হায়াত বৃদ্ধি করুন।” (নাসায়ি: ৬৫৯; মুসনাদে আহমদ: ২৩৪৬, আলমুজামুল আওসাত: ৩৯৩৯)

প্রখ্যাত হাদিসবিশারদ মোল্লা আলী কারি (রহ) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘অর্থাৎ হে আল্লাহ, রজব ও শাবান মাসে আমাদের ইবাদত-বন্দেগিতে বরকত দান করুন এবং রমজানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সিয়াম-কিয়াম তথা রোজা ও তারাবিহর তাওফিক দান করুন।’ (মিরকাত: ৩/৪৬৩)

রজব মাসে রাসুলুল্লাহ (স.) অন্যান্য নেক আমলের পরিমাণও বাড়িয়ে দিতেন। আল্লাহর প্রকৃত বান্দারাও রজব মাসের গুরুত্ব উপলব্ধি করে থাকেন এবং নেক আমলের দিকে ঝুঁকে পড়েন। এর কারণ বর্ণনায় উলামায়ে কেরাম বলেন, আশহুরে হুরুমের এই বৈশিষ্ট্য রয়েছে যে, এসব মাসে ইবাদতের প্রতি যত্নবান হলে বাকি মাসগুলোতে ইবাদতের তাওফিক হয়। আর আশহুরে হুরুমে কষ্ট করে গুনাহ থেকে বিরত থাকতে পারলে অন্যান্য মাসেও গুনাহ পরিহার করা সহজ হয়। (আহকামুল কোরআন, জাসসাস: ৩/১১১; মারেফুল কোরআন: ৪/৩৭২)

হজরত আবু বকর বলখি (রহ.) বলেন, ‘রজব হচ্ছে ফসল রোপণের মাস, শাবান ফসলে পানি সেচ দেওয়ার মাস আর রমজান হলো ফসল তোলার মাস।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘রজব মাস ঠাণ্ডা বাতাসের মতো, শাবান মাস হলো মেঘমালার মতো আর রমজান মাস হলো বৃষ্টিতুল্য।’ (লাতায়েফুল মাআরেফ: পৃষ্ঠা ১৪৩)

তবে রজব মাসে বিশেষ কিছুদিন রোজা রাখার ভিত্তি ইসলামে নেই। মূলত ‘হারাম’ মাসগুলোতে (রজব অন্যতম) রোজা রাখা মোস্তাহাব। কেননা নবী (স.) থেকে এ বিষয়ে হাদিস রয়েছে যে, ‘হারাম মাসগুলোতে রোজা রাখো এবং রোজা ভঙ্গও করো।’ (আবু দাউদ: ২৪২৪)

এর অর্থ এই নয় যে, বিশেষ কয়েকদিন রোজা রাখা ফজিলতপূর্ণ। বরং রজব মাসকে কেন্দ্র করে জাহেলি সবরকম কুসংস্কার থেকে বেঁচে থাকতে হবে। ইসলামপূর্ব যুগে রজব মাসে মুশরিকদের মধ্যে স্বীয় দেবতা/প্রতিমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পশু জবাই করার রেওয়াজ ছিল। একে ‘আতীরা’ বলা হত। রাসুলুল্লাহ (স.) এই শিরকি রেওয়াজের মূলোৎপাটন করেছেন। স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, ‘ইসলামে ‘ফারা’ (উট বা বকরির প্রথম বাচ্চা প্রতিমার উদ্দেশ্যে) জবাই করার কোনো প্রথা নেই এবং ‘আতীরা’ও নেই। অর্থাৎ রজব মাসে প্রতিমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পশু জবাই করার প্রথাও নেই।’ (সহিহ বুখারি: ২/৮২২)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রজব মাসের গুরুত্ব উপলব্ধি করার তাওফিক দান করুন। বেশি বেশি নেক আমল করার এবং সবরকম গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।