• ১৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৩১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুই শ্রেণির মানুষকে শরিক করলে আপনার কোরবানি হবে না

ডেস্ক
প্রকাশিত জুন ৬, ২০২৩, ১১:৩৭ পূর্বাহ্ণ
দুই শ্রেণির মানুষকে শরিক করলে আপনার কোরবানি হবে না
সংবাদটি শেয়ার করুন....

কোরবানি ইসলামি শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি ইসলামের একটি শিয়ার বা মহান নিদর্শন। আল্লাহ তাআলা কোরবানির নির্দেশ দিয়ে বলেন— ‘আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি আদায় করুন।’ (সুরা কাউসার: ২)

কোরবানি সহিহ হওয়ার জন্য নিয়তের শুদ্ধতা ও হালাল উপার্জন থেকে কোরবানি করা জরুরি। কেউ বোড়লোকি জাহির করার জন্য কিংবা গোশত খাওয়ার নিয়তে কোরবানি করলে তার শুধু গোশতই খাওয়া হবে, কোরবানি হবে না। কারণ আল্লাহ বান্দার তাকওয়াটাই যাচাই করেন কোরবানির মাধ্যমে। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর নিকট এগুলোর গোশত এবং রক্ত পৌঁছায় না, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া। এভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর এজন্য যে, তিনি তোমাদের পথ-প্রদর্শন করেছেন; সুতরাং আপনি সুসংবাদ দিন সৎকর্মপরায়ণদের।’ (সুরা হজ: ৩৭)

সুতরাং হারাম টাকা দিয়ে কেউ কোরবানি করলে তার কোরবানি আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। কেননা ‘আল্লাহ তাআলা পবিত্র; শুধুমাত্র পবিত্রটাই তিনি গ্রহণ করেন…।’ (তিরমিজি: ২৯৮৯) পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ব্যয় কর তোমাদের অর্জিত হালাল সম্পদ থেকে।’ (সুরা বাকারা: ২৬৭)

নিয়তে সমস্যা কিংবা উপার্জন হারাম—এমন লোককে শরিক বানালে সকল শরিকের কোরবানি বিনষ্ট হবে। এ বিষয়ে ফতোয়ার কিতাবগুলোতে বলা হয়েছে—যদি কেউ আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কোরবানি না করে শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কোরবানি করে তাহলে তার কোরবানি সহিহ হবে না। তাকে অংশীদার বানালে শরিকদের কারো কোরবানি হবে না। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে শরিক নির্বাচন করতে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২০৮, কাজিখান: ৩/৩৪৯)

হারাম উপার্জনকারীদের মধ্যে রয়েছে সুদখোর এবং সুদের সঙ্গে জড়িত সবাই। আরও আছে হাদিয়ার নামে যারা ঘুষ খায়। এছাড়াও চোর-ডাকাত ইত্যাদি লোকজন হারাম উপার্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত। এসব লোকের কোরবানির টাকাটা অন্তত হালাল হলে তবেই আপনার কোরবানি শুদ্ধ হবে।

কারো উপার্জন হারাম হওয়ার ব্যাপারে জানা না থাকলে কি কোরবানি শুদ্ধ হবে? এ ব্যাপারে আলেমদের বক্তব্য হলো- এতে শরিকদের কোরবানি শুদ্ধ হবে। কেননা আল্লাহ তাআলা অজ্ঞতার গুনাহ ক্ষমা করেন। তবুও আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার করা উচিত। এরপরও কারো উপার্জনের ব্যাপারে সংশয় থাকলে তাদের শরিক বানিয়ে ঝুঁকি নেওয়া অনুচিত। প্রয়োজনে একজন একটি ছোট পশু কোরবানি করা শ্রেয় হবে।

আর যদি কোরবানির আগেই কোনো শরিকের হারামের ব্যাপারে নিশ্চিত হন, তাহলে চেষ্টা করবেন শরিক থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু সেটা সম্ভব না হলে আপনার কোরবানি হয়ে যাবে, কোনো অসুবিধা নেই। যেহেতু হয়ত আগে থেকে চুক্তি হয়ে গেছে, এখন সরানো সম্ভব হচ্ছে না এবং নতুন পশু কেনার সামর্থ্য বা সময় নেই। তাই আলেমরা বলেন যে এই পরিস্থিতিতে আপনার অংশ যদি শুদ্ধ থাকে, তাহলে আপনার কোরবানি হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

কিন্তু জেনেশুনে হারাম উপার্জনকারীকে কোরবানির অংশিদার বানালে বিশুদ্ধ মতানুযায়ী কোনো শরিকেরই কোরবানি হবে না, যা আগেই বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা দ্বারা কোরবানি দিলে একা দিতে হবে (মুসলিম: ১৩১৮; কাজিখান: ৩/৩৪৯)। গরু-মহিষ ও উটের ক্ষেত্রে একটি প্রাণীতে সর্বাধিক সাতজন অংশীদার হতে পারেন, চাই একই পরিবারের সদস্য হোক বা একাধিক পরিবারের। (নুখাবুল আফকার: ১২/৫৩২, মিরকাত: ৩/১০৮০)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে হারাম উপার্জনকারীদের আগে থেকে শনাক্ত করার তাওফিক দান করুন। কোরবানি বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য সুন্নাহর নির্দেশনা অনুযায়ী কোরবানি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।