রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দেশের বাজারে হঠাৎই আলুর দাম বেড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যের দামে সাধারণ মানুষের মধ্যে যেন এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে।
আলুর দাম সাধারণের নাগালের মধ্যে আনতে সরকার বুধবার (১ নভেম্বর) আমদানির অনুমতি দিলেও বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিম আমদানির মতো একই ঘটনা যদি আলুর ক্ষেত্রে হয়, তাহলে আমদানির অনুমতি দিয়ে কোনো লাভ হবে না।
তারা বলছেন, আমদানির অনুমতির সঙ্গে বাজারে সরবরাহ বা বণ্টনের যে প্রতিবন্ধকতা আছে, সরকারকে তা দূর করতে হবে। আর কোল্ড স্টোরেজগুলোতে এখনো যে পরিমাণ আলু মজুত আছে, তা ঠিকমত সরবরাহ করা গেলে ডিসেম্বর পর্যন্ত সুন্দরভাবে চলবে।
বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি গোল আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি আলুর দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকার মতো। বুধবার রাজধানীর খিলগাঁও বাজার, মালিবাগ বাজারসহ পাড়া-মহল্লার বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে আলুর দামের এমন চিত্র দেখা গেছে।
বাজারে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় এক মাস ধরে আলুর বাজারে অস্থিরতা রয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন খুচরা বাজার ও এলাকার মুদি দোকানে প্রতি কেজি আলু ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগেও এই আলু বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। গেল আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসেও আলুর দাম ছিল ৩৬ থেকে ৪০ টাকা।
দক্ষিণ বনশ্রীর বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক জুয়েল মুদি দোকানে আলু কিনতে এসে বাড়তি দাম দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কথা হলে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা যে যেভাবে পারেন, ইচ্ছামতো দাম রাখছেন। আলুর দাম কখনই এত বেশি হওয়ার কথা নয়, সর্বোচ্চ ৩০ টাকা পর্যন্ত এর দাম মানা যায়। কিন্তু আজ দুই কেজি আলু ১২০ টাকায় কিনতে হয়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি মানুষকে যতটা না আতঙ্কগ্রস্ত করছে, এর চেয়ে বেশি করছে আলুর দাম।
সরকারের পক্ষ থেকে বুধবার (১ নভেম্বর) থেকে দেশের কোল্ড স্টোরেজ (পাইকারি) পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু ২৬-২৭ টাকায় বিক্রি করতে বলা হয়েছে। আর খুচরা পর্যায়ে আলু ৩৬ টাকা বিক্রি হওয়ার কথা।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মূল্য তালিকা পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এক বছর আগে একই সময়ে প্রতি কেজি আলুর দাম ছিল মানভেদে সর্বোচ্চ ২৪ থেকে ২৮ টাকার মতো।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, দেশে আলুর বার্ষিক চাহিদা ৮৫ থেকে ৯০ লাখ টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে আলু উৎপাদন হয়েছে এক কোটি টনের বেশি। সে হিসাবে আলুর সংকট থাকার কথা নয়।
গেল ২ অক্টোবর সিরডাপ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছিলেন, বাজারে খুচরা পর্যায়ে আলুর কেজি কোনোভাবেই ৪০ থেকে ৪৫ টাকার বেশি হতে পারে না। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আলুর দাম বাড়ানো হচ্ছে। এ জন্য সরকার আলু আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে।
কোল্ড স্টোরেজে যে পরিমাণ আলু মজুত আছে, তা যদি সুষ্ঠুভাবে সরবরাহ বা বণ্টন করা যায়, তাহলে আগামী ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত আলুর বাজার স্থিতিশীল থাকবে বলে মনে করছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাবের) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন।
ক্যাবের এই ভাইস প্রেসিডেন্ট বাংলানিউজকে বলেন, সরকার আলু আমদানির অনুমতি দিয়েছে। তাতে করে বাজারে যদি সরবরাহ বাড়ে তাহলে অবশ্যই আলুর দাম কমবে। ডিম আমদানি অনুমতি দিয়েছিল সরকার। কিন্তু তা বাজারে আসেনি। একই ঘটনা আলুর ক্ষেত্রে হলে অনুমতি দিয়ে কোনো লাভ হবে না। আমদানির অনুমতি দেওয়ার পর বাজারে যেসব প্রতিবন্ধকতা আছে, সেগুলো সরকারকে দূর করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা সব সময় বলে আসছি, আলু কোল্ড স্টোরেজে মজুদ আছে, সেগুলোকে যদি সুষ্ঠুভাবে বণ্টনের আওতায় আনা যায়, তাহলে আগামী ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত আলুর বাজার স্থিতিশীল থাকবে। আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, সেই হিসাব অনুযায়ী ততদিনে নতুন আলু বাজারে চলে আসবে।
মজুতকারী আইন বা বিশেষ আইনের মাধ্যমে যদি আলু সিন্ডিকেটদের শাস্তির আওতায় আনা যায়, তাহলে বাজারে আলুর সরবরাহ বা বণ্টন নিশ্চিত হবে উল্লেখ করে ক্যাবের ভাই প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসেন বলেন, বণ্টন বা সরবরাহ ঠিক থাকলে দাম এমনিতেই কমবে। সাধারণ ক্রেতার নাগালের মধ্যে থাকবে আলুর দাম।