জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভেটো দেন। ছবি: রয়টার্স
ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিরতির জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে এই খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল ব্রাজিল।
বৃহস্পতিবার আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় বুধবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের মোট ১৫ সদস্যের মধ্যে ১২ সদস্যই এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। বিপক্ষে একমাত্র ভোট দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে রাশিয়া ও যুক্তরাজ্য এই প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল।
ভেটো দেওয়ার বিষয়ে জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড ভোটের পর পরিষদকে বলেন, ‘আমরা কূটনৈতিকভাবে অনেক কাজ করি। আমাদেরকে আমাদের মতো কাজ করতে দেওয়া উচিত।
জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেছেন, মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে রাশিয়ার আনা একটি খসড়া প্রস্তাবও সোমবার নিরাপত্তা পরিষদে পাস হয়নি।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত বুধবার গাজায় জিম্মিদের মুক্তি এবং মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকারের জন্য অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে কোনো প্রস্তাব পাসের জন্য দরকার অন্তত ৯ সদস্য দেশের সমর্থন। তবে স্থায়ী পাঁচ সদস্য দেশের যে কোনো একটি ভেটো দিলে তা বাতিল হবে।
ওয়াশিংটন বরাবরই মিত্র দেশ ইসরায়েলকে নিরাপত্তা পরিষদের যেকোনো পদক্ষেপ থেকে রক্ষা করে আসছে। রাশিয়ার জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেছেন, ‘আমরা আবারও ভণ্ডামি এবং আমাদের যুক্তরাষ্ট্রের সহকর্মীদের নিয়ম বা নীতি অন্যায়ভাবে অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার সাক্ষী হয়েছি।’
বুধবার নিরাপত্তা পরিষদে উপস্থাপিত প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দ্বিমুখী আচরণের অভিযোগ তুলেছে চীন। জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং জুন বলেছেন, প্রস্তাব উপস্থাপনের আগে আলোচনার সময় যুক্তরাষ্ট্র এর বিপক্ষে কিছু না বলায় পরিষদের সদস্যদের ধারণা হয়েছিল প্রস্তাবটি সম্ভবত গৃহীত হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে পরে তাতে ভেটো দিয়েছে।
এদিকে বুধবারই ইসরায়েল সফর করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গাজার হাসপাতালে ভয়াবহ হামলায় ইসরায়েল জড়িত নয় বলে দাবি তার। তেল আবিবে দাঁড়িয়ে ইসরায়েলকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ইসরায়েল আজ, আগামী এবং চিরদিনের জন্য নিরাপদ ইহুদি এবং গণতান্ত্রিক দেশ থাকবে। যারা শান্তির জন্য কাজ করছেন সৃষ্টিকর্তা তাদের রক্ষা করুন। সেইসঙ্গে যারা খারাপ পথে আছে তাদেরও রক্ষা করুন।
ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩ হাজার ৪৮৮ জনে। এছাড়া ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫ জনে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এসব তথ্য জানিয়েছে। এদিকে অবরুদ্ধ গাজায় খাবার পানিও শেষ হয়ে গেছে। সেখানে মানবিক সংকট চরমে পৌঁছেছে।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অবরুদ্ধ উপকূলীয় ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে আহত হয়েছে ১২ হাজারের বেশি মানুষ। পশ্চিম তীরে আহতের সংখ্যা ১৩০০ এর বেশি।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিহদের মধ্যে দুই তৃতীয়াংশই শিশু। বাকিদের বেশিরভাগই নারী। আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, গাজায় নিহতদের মধ্যে এক হাজারের বেশি শিশু রয়েছে। অপরদিকে ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন ১৪,০২ জন। এছাড়া আহত হয়েছেন ৪,৪৭৫ জন।